বিশ্বব্যাপী ফাইভজি নেটওয়ার্কের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০২৯ সালের মধ্যে মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৬০ কোটিতে পৌঁছাবে। এছাড়া, চীনে ফাইভজি কভারেজ ৪০ থেকে ৮০ শতাংশে উন্নীত হবে। সম্প্রতি এরিকসনের মবিলিটি রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদটি বণিক বার্তা থেকে জানা গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী তিন শতাধিক কমিউনিকেশন সার্ভিস প্রোভাইডার (সিএসপি) ফাইভজি সংযোগ সরবরাহ করছে। এদের মধ্যে ৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠান ফাইভজি এসএ চালু করেছে। বিশ্বজুড়ে ফাইভজি নেটওয়ার্কের পরিধি ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে, ২০২৯ সালের শেষ নাগাদ মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর ৬০ শতাংশই ফাইভজি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত থাকবে বলে প্রতিবেদনটি উল্লেখ করেছে।
এরিকসনের মবিলিটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে বিশ্বব্যাপী ১৬ কোটি নতুন ফাইভজি ব্যবহারকারী যুক্ত হয়েছে এবং মোট ব্যবহারকারী সংখ্যা ১৭০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বাজার বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, চলতি বছরে আরও ৬০ কোটি ব্যবহারকারী ফাইভজিতে যুক্ত হবে।
গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মোবাইল নেটওয়ার্ক ডাটা ট্রাফিক ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পরবর্তী প্রজন্মের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ভিডিও পরিষেবা ট্রাফিক বাড়ার কারণে এই বৃদ্ধির হার দেখা গেছে। মবিলিটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৯ সালের শেষ নাগাদ মোবাইল ডাটা ট্রাফিক বার্ষিক ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে।
এরিকসনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নেটওয়ার্ক বিভাগের প্রধান ফেডরিক জেজডলিং বলেন, ‘জুনের এরিকসন মবিলিটি রিপোর্টে ফাইভজি নেটওয়ার্কের প্রতি ব্যবহারকারীদের আগ্রহের বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে।’
প্রযুক্তিবিদদের মতে, প্রতিবেদনে উল্লেখিত সময়সীমার আগেই মোবাইল নেটওয়ার্ক সাবস্ক্রিপশন ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ফাইভজি শীর্ষে পৌঁছে যাবে। পাশাপাশি, এই নেটওয়ার্কের আওতায় থাকা জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীন বাদে বিশ্বের মাত্র ২৫ শতাংশ অঞ্চলে ফাইভজি মিড-ব্যান্ড চালু করা হয়েছে। এটি সক্ষমতা কভারেজ এবং ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা উন্নয়নে উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রসর। ফাইভজি বিস্তারের পাশাপাশি স্পেক্ট্রাম সরবরাহকারীরা অন্যান্য কানেক্টিভিটি সেবার উন্নয়নে কাজ করছে।
গত বছর ফাইভজি নেটওয়ার্ক সংযোগের সংখ্যা ১৭৬ কোটি ছাড়িয়েছে। ফাইভজি আমেরিকাসের প্রতিবেদনে টেকটাইমসে প্রকাশিত খবরে এ তথ্য জানা গেছে। সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট ক্রিস পিয়ারসন নতুন উদ্ভাবন ও সংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ফিক্সড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস ব্রডব্যান্ড চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। খাত সংশ্লিষ্টরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে বিশ্বব্যাপী ফাইভজি সংযোগ বাড়ানোর কাজ করছে।
সংবাদমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে ক্রিস পিয়ারসন জানান, ওয়্যারলেস টেলিযোগাযোগ খাত একটি নতুন যুগের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। ফিক্সড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস ভোক্তা পর্যায়ে ব্রডব্যান্ডের চাহিদা পূরণ করছে। নতুন প্রযুক্তির মাইলফলক বিশ্বব্যাপী টেলিযোগাযোগ সংযোগ অভিজ্ঞতাকে উন্নত করছে।
ফাইভজি আমেরিকাসের প্রতিবেদন অনুসারে, ফাইভজি গ্রহণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে উত্তর আমেরিকা শীর্ষে রয়েছে। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এ অঞ্চলে ফাইভজি সংযোগ ৬৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলস্বরূপ, সেখানে ১৯ কোটি ৭০ লাখ ফাইভজি সংযোগ রয়েছে, যা অঞ্চলের মোট সংযোগের ২৯ শতাংশ।
লাতিন আমেরিকাও অগ্রসর হচ্ছে। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ এই অঞ্চলে ফোরজি লং-টার্ম ইভোলিউশন (এলটিই) সংযোগ ৫৮ কোটি ২০ লাখ এবং ফাইভজি সংযোগ ৩ কোটি ৯০ লাখ ছাড়িয়েছে। যদিও ফাইভজি নেটওয়ার্ক প্রবেশ করেছে, তবে অঞ্চলটিতে এখনো ফোরজি এলটিইর ব্যবহার বেশি।
বাজার বিশ্লেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওমডিয়া টেলিযোগাযোগ খাতের জন্য আরো ভালো সময়ের পূর্বাভাস দিয়েছে। সংস্থাটির মতে, ২০২৮ সালের মধ্যে ফাইভজি নেটওয়ার্কের বৈশ্বিক সংযোগ ৭৯০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।