বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা জানান। এ সাক্ষাতে উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, নাহিদ ইসলাম ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা সম্পর্কে অবহিত করে স্বাগত জানান। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সবসময়ই ফ্রান্সের প্রতি আগ্রহী।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম রাষ্ট্রদূতকে বলেন, ‘বর্তমান সময়ে সাইবার নিরাপত্তা বর্ডার সিকিউরিটির মতোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যদি আমাদের তরুণরা এবং সরকারি কর্মকর্তারা এই প্রশিক্ষণ পান, তাহলে তা দেশের জন্য খুবই লাভজনক হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের জন্য ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগ করা হলেও দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে তার পুরো সুফল দেশের জনগণ পায়নি। আমরা দুর্নীতির জায়গাগুলো তদন্ত করে দেখছি।’
রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই সাম্প্রতিক বন্যায় মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করলে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানান, বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোর সাথে যোগাযোগ অত্যন্ত জরুরি ছিল, তাই সেখানে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করা হয়েছে এবং ভি-স্যাট স্থাপন করা হয়েছে। মোবাইল টাওয়ারে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য জেনারেটরের জ্বালানি ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে দেশের প্রতিটি জেলায় ভি-স্যাট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে যাতে যে কোনো দুর্যোগে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা যায়।
বাংলাদেশের আইসিটি খাতে কাজ করার সুযোগ রয়েছে, এবং দেশের যুবসমাজ এই খাতে কাজ করতে অত্যন্ত আগ্রহী বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, প্রণোদনা পেলে তরুণরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আরও ভালো করতে পারবে।
রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে ফ্রান্স সরকারের প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রস্তাব করলে উপদেষ্টা ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সাইবার নিরাপত্তা বর্তমানে সীমান্ত নিরাপত্তার মতোই জরুরি। এই প্রশিক্ষণ দেশের তরুণদের এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে।
আন্দোলন সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। ছাত্ররাই এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে এবং সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমান সরকার ছাত্র-জনতার প্রস্তাবিত সরকার, এবং আমরা দুজন সরকারে যুক্ত হলেও বাকিরা এখনও আন্দোলনের সাথে যুক্ত আছে। তারা প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করছে যাতে আন্দোলনের উদ্দেশ্যগুলি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, আমরা একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে চাই যেখানে সবাই দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য একযোগে কাজ করবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং ৭১ টিভির সাংবাদিক ফারজানা রুপা সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় অত্যন্ত সচেতন। আমরা চাই না কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার হোক। পূর্ববর্তী সরকারের সময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করা হয়েছিল, আমরা চাই না ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটুক। ৭১ টিভি এবং ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে কিছু গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, যা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে সবাই নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে।
এই সাক্ষাৎকালে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ডা. মো. মুশফিকুর রহমান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. শামসুল আরেফিনসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।