চীনের বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়ে নেটওয়ার্কের সক্ষমতা বাড়াতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী ছয় মাসের মধ্যে হাংঝো, গুয়াংঝো, ব্যাংকক, জিনান এবং শেনজেনে এক হাজার সাইট ইঞ্জিনিয়ার এবং দশ হাজার সাইটকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। হুয়াওয়ের ওয়্যারলেস সল্যুশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং চিফ মার্কেটিং অফিসার এরিক ঝাও এ কথা জানিয়েছেন। মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস সাংহাই ২০২৪-এ আয়োজিত ‘ফাইভজি এডভান্স ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ গোলটেবিলে এরিক ঝাও নেটওয়ার্কে এআই ব্যবহারের বিষয়ে কথা বলেন।
ঝাও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো এআই-কে নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত করা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা একটি সল্যুশন প্রোভাইডার থেকে ইন্টেলিজেন্ট নেটওয়ার্কের সহ-নির্মাতা (কো-বিল্ডার) হিসেবে কাজ করবো। আমরা বিশ্বাস করি যে, আরএএন ইন্টেলিজেন্ট এজেন্ট ও নেটওয়ার্কগুলোর যৌথ উন্নয়ন আরও বিস্তৃত ব্যবসায়িক মূল্য তৈরি করবে, আরও দ্রুত নেটওয়ার্কগুলিকে রূপান্তরিত করবে এবং আমাদের শিল্পকে বুদ্ধিমত্তার নতুন যুগে নিয়ে যাবে।”
টেলিকম খাতে তিন বছরের নিরলস প্রচেষ্টার পর ফাইভজি-এ (এডভান্স) পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ পেয়েছে। ২০২৪ সালকে বাণিজ্যিকভাবে ফাইভজি-এ-এর প্রথম বছর হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। নেটওয়ার্ক, ব্যবসা ও ডিভাইস ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে ফাইভজি-এ উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। বর্তমানে মোবাইল নেটওয়ার্ক জটিল কার্যক্রম ও রক্ষণাবেক্ষণ, নেটওয়ার্কের বৈশিষ্ট্য ও বিভিন্ন অভিজ্ঞতাভিত্তিক কার্যক্রমের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে হুয়াওয়ে নেটওয়ার্কে এআই ব্যবহারের প্রস্তাব করেছে। রেডিও এক্সেস নেটওয়ার্ক (আরএএন) ইন্টেলিজেন্ট এজেন্ট তৈরি করে নেটওয়ার্কের কার্যক্রম ও রক্ষণাবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা ও সেবায় নতুন মাত্রা যোগ করা হবে।
আরএএন ইন্টেলিজেন্ট এজেন্ট বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে সহজ করে দক্ষতা বাড়ায়। এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো হুয়াওয়ের চালু করা ফিল্ড মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার কোপাইলট। এই ধরনের প্রথম প্রযুক্তি হিসেবে চালু হওয়া কোপাইলটটিতে এআই-ভিত্তিক অ্যাসিস্টেন্ট রয়েছে, যা বিশেষায়িত তথ্যের ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে সল্যুশন পলিসি তৈরি করে দক্ষতা বাড়াতে পারে। একটি ফিল্ড কেসে এটি দশগুণ বেশি দক্ষতার সাথে অপটিক্যাল পাথ ফল্ট পরিচালনায় সাহায্য করছে।
নেটওয়ার্ককে স্বাধীন ও কার্যকরভাবে কাজ করতে এবং শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করে আরএএন ইন্টেলিজেন্ট এজেন্ট। এই অপ্টিমাইজেশন প্রক্রিয়াটি মাল্টি-ডাইমেনশনাল হাই-প্রিসিশন সেন্সিং এবং অপটিমাল এক্সপেরিয়েন্স ও ইনার্জি-সেভিং পলিসির উপর ভিত্তি করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। মোট ২২৩টি সেলে আবৃত একটি এলাকায় আরএএন ইন্টেলিজেন্ট এজেন্ট কয়েক হাজার ঘণ্টা ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছে। এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শক্তির ব্যবহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে রেখে কার্যকারিতা সর্বোচ্চ করা সম্ভব হয়েছে। এই ধরনের স্বয়ংক্রিয় নেটওয়ার্কের কার্যক্রম ও রক্ষণাবেক্ষণ বাস্তবায়নে হুয়াওয়ে এই প্রথম অপারেটরদের সাথে কাজ করেছে।
নেটওয়ার্ক রিসোর্সের রিয়েল-টাইম ইভ্যালুয়েশনের মাধ্যমে অভিজ্ঞতাভিত্তিক পরিষেবা কার্যক্রমগুলোকে সহায়তা করে আরএএন ইন্টেলিজেন্ট এজেন্ট। এটি প্রয়োজন অনুযায়ী অপারেটরদের নতুন পরিষেবা সরবরাহ করতে এবং নির্ধারিত পরিষেবার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে ফাইভজি-এ লাইভস্ট্রিমিং অ্যাসিউরেন্স প্যাকেজটি বিশেষভাবে সহায়ক। বিশ্বে প্রথম এই ধরনের লাইভ স্ট্রিমিং প্যাকেজ হিসেবে এটি ফলচাষীদের কাঙ্ক্ষিত আপলিংক স্পিড প্রদান করেছে, যার মাধ্যমে তারা লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে সহজে পৌঁছাতে পেরেছে।