ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইনে আপত্তিকর কনটেন্ট ও অপরাধমূলক কার্যক্রমের বৃদ্ধি রোধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে বিটিআরসি। নিজেদের ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা সেল’কে পুনর্গঠন করছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি, যেখানে জনবল কাঠামো ও কর্মপরিধি পরিবর্তন করা হচ্ছে।
বিটিআরসির এই সেল দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশসহ ১৯টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে রাষ্ট্রবিরোধী, সামাজিক মূল্যবোধ বিরোধী, পর্নোগ্রাফি, অনলাইন ক্ষতিকর গেমস, অনলাইন বেটিং বা জুয়া, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় উস্কানিমূলক, উগ্র ও জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন আপত্তিকর কনটেন্ট সরানোর কাজ করে।
নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি বলছে, বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া, ডোমেইন, অ্যাপ ও ওটিটি প্লাটফর্মে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। এর পাশাপাশি অপব্যবহার ও অপরাধও বেড়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি সংস্থাগুলির কাছ থেকে বিপুল সংখ্যায় কনটেন্ট মডারেশনের অনুরোধ পায় এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদন সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
বিটিআরসি জানায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা সেল প্রতিদিন গড়ে ১৩০টি পর্যন্ত লিংক বা পোস্ট সরানোর অনুরোধ সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়াতে রিপোর্ট করে থাকে। এখন এই সেলের পদসংখ্যা চার থেকে বাড়িয়ে নয় করা হচ্ছে এবং জনবল ২১ থেকে ৩৬ জনে উন্নীত হচ্ছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, "দেশের মানুষ যেন নিরাপদে স্বাচ্ছন্দ্যে ইন্টারনেট ও অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করতে পারে এবং প্রতারণা ও অপরাধের শিকার না হন সেজন্য বিটিআরসি প্রতিনিয়ত কাজ করছে।"
তিনি আরও বলেন, "বিটিআরসির ডিজিটাল নিরাপত্তা সেলের পদ ও জনবল বাড়াতে ইতোমধ্যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ফলে এই সেল আরও সক্রিয় ও ব্যাপক পরিসরে কাজ করতে পারবে।"
বেটিং বা জুয়ার সাইট-অ্যাপসহ ডিজিটাল মাধ্যমের অপব্যবহার নিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, "এই বিষয়গুলো নিয়ে সম্প্রতি আমরা ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকম, ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার, কম্পিউটার কাউন্সিল, বিটিআরসি এবং সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি- সবাইকে নিয়ে বসেছিলাম। যার যতটুকু সক্ষমতা আছে, পুলিশ এবং ইন্টেলিজেন্স, সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে একটি ড্রাইভ দিচ্ছি। আরও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রযুক্তি প্রয়োগ করে আমরা এগুলো ব্লক করার চেষ্টা করছি।"
গত ৩ বছরে ফেইসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ার যত কনটেন্ট অপসারণ করা হয়েছে, বিটিআরসি ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭০৪টি লিংক বা পোস্ট অপসারণের অনুরোধ পাঠায়। এর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ৫০ হাজার ৫৯৫টি লিংক বা পোস্ট সরিয়েছে, যেখানে অপসারণের হার ৩৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।
ওয়েবসাইট বা ডোমেইন বন্ধ করা হয়েছে ৫ হাজার ৬৪১টি, যেগুলোর বিরুদ্ধে আপত্তিকর, অপব্যবহার ও অপরাধমূলক কার্যক্রমের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। সর্বশেষ এক বছরে ২৩৮৭টি বেটিং বা জুয়ার সাইট ও ডোমেইন বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া অ্যাপ বন্ধের জন্য ২৬৭টি অনুরোধ করা হয়, যার মধ্যে ১০৬টি বন্ধ হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে এই সংক্রান্ত পেইজ বা পোস্ট বন্ধের জন্য ৯ হাজার ৬৭২টি অনুরোধ করা হয় এবং ৮ হাজার ২১৩টি বন্ধ হয়েছে।
এক বছরে ১৮৮০টি পর্নোগ্রাফি ও আপত্তিকর সাইট বন্ধ করা হয়েছে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে ১০৫৫টি ইস্যুতে অনুরোধ পাঠানো হয়, যার মধ্যে ৭১২টি বন্ধ হয়েছে।