‘কমব্যাট ড্রোন’ এ শক্তিশালী হচ্ছে ছোট দেশগুলোও

বিদ্রোহী এবং ছোট ছোট দেশগুলোয় এই ড্রোনের ব্যবহার যুদ্ধের ধরন পরিবর্তন করে দিয়েছে।

কমব্যাট ড্রোন
'কমব্যাট ড্রোন' এ শক্তিশালী হচ্ছে ছোট দেশগুলোও

এক সময় যুদ্ধ করার ড্রোনগুলো কেবলমাত্র সামরিক পরাশক্তিধরদের জন্য সংরক্ষিত ছিলো। তবে বর্তমানে এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ নেই। বিদ্রোহী এবং ছোট ছোট দেশগুলোও এই ড্রোনের ব্যবহারের মাধ্যমে যুদ্ধের ধরন পরিবর্তন করে ফেলেছে। সামরিক ইতিহাসে প্রায়ই দেখা যায়, একটি অস্ত্র ব্যবস্থা গোটা যুদ্ধ যুগের প্রতীক হয়ে ওঠে। অনেকে মনে করেন মধ্যযুগের অ্যাগিনকোর্টে ইংরেজি তীরন্দাজদের লংবো ব্যবহার অথবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্থলযুদ্ধের ভারী সাঁজোয়া যানগুলো এর উদাহরণ। আফগানিস্তান, ইরাক এবং অন্যান্য দেশে বিদ্রোহীদের দমাতে যুক্তরাষ্ট্র এমকিউ-ওয়ান অথবা ইউএভি ব্যবহার করেছে। অন্যদিকে, আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ড্রোনের সাথে হেলফায়ার ক্ষেপনাস্ত্র যুক্ত করার পর এটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রতীকী মর্যাদা পেয়েছে। ড্রোনের উত্তরসূরী ‘রাপার’ মূলত শিকারি বা হত্যাকারী হিসেবে সফল ছিলো আর এর তুলনায় ড্রোনের ক্ষমতা অনেক বড় এবং বড় ওজনের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, যা একে নির্দিষ্ট ঘাতক হিসেবে তৈরি করে। ওয়াশিংটনের প্রত্যাশা অনুযায়ি যখন এবং যেখানে প্রয়োজন শত্রুদের লক্ষ্য করতে পারে। ধারণা করা হয় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাগদাদ এয়ারপোর্টের বাইরে ইরানের জেনারেল কাশেম সোলায়মানিকে হত্যা করতে রাপার ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল। এছাড়া একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল (যাদের নিজস্ব ড্রোন শিল্প রয়েছে) বড় পরিসরে এ ধরনের অপারেশন পরিচালনায় সক্ষম হয়। একে যুদ্ধ ড্রোনের প্রথম পর্যায় বলা হয়।

বর্তমানে পরিস্থিতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে ড্রোন যুদ্ধের নতুন যুগে অনেক দেশের সাথে বিদ্রোহী গোষ্ঠীও একত্রিত হয়েছে। সন্ত্রাস বিরোধী অথবা বিদ্রোহ দমন কার্যক্রম থেকে ড্রোনের ব্যবহার পূর্ণমাত্রায় প্রচলিত যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া ড্রোনে এখন আরও সংবেদনশীল এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহৃত হওয়ায় একটি নতুন তৃতীয় যুগের যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সরকার অভ্যন্তরীণ সংঘাত নিরসনেও ড্রোন ব্যবহার করছেন। টিপিএলএফের (টাইগারি পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট) সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে আদ্দিস আবাবার সরকারের অবস্থান শক্তিশালী করতে ড্রোন হামলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে তুরস্ক ও ইরান থেকে সশস্ত্র ড্রোন কিনেছে ইথিওপিয়া সরকার। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মাধ্যমে চীনের ওয়িং লুং টু ইউএভি ড্রোন কিনেছে। ইউএই একইভাবে লিবিয়ার সামরিক যুদ্ধে তাদের মিত্র জেনারেল খলিফা হাফতারকে সহায়তা করতে চীনের তৈরি ড্রোন সরবরাহ করেছিল।

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশের ফিনটেক খাতে বিনিয়োগের আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রকে

ড্রোন হামলা প্রায়ই আইনি জটিলতা এবং নৈতিক দ্বিধা তৈরি করে। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের প্রত্যাশা ক্রমে অসাধ্য হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছাড়া অন্য কারও কাছে তাদের উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র রপ্তানি না করতে চাইলেও ড্রোনের বিস্তার থামানো যাচ্ছে না। শতাধিক দেশ এবং রাষ্ট্রবিহীন গ্রুপের ড্রোন রয়েছে। এছাড়া অনেক সংস্থারও সশস্ত্র ড্রোন রয়েছে। সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির পরিচালক পল শ্যারে এ প্রসঙ্গে বলেন, এই ব্যবস্থার বিস্তার অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। তিনি আরও বলেছেন, ‘চীন এখন পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ সশস্ত্র ড্রোন রপ্তানিকারক। ড্রোন এখন শুধুমাত্র বড় সামরিক শক্তিধরদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ইরান ও তুরস্কের মতো মধ্যম ক্ষমতাধর দেশগুলোরও ড্রোন প্রযুক্তি রয়েছে এবং তারা তা বিদেশেও বিক্রি করে।’ তিনি জানান, বাণিজ্যিক ড্রোন প্রযুক্তি এখন এতোটাই সহজলভ্য যে কেউই মাত্র কয়েকশ ডলারের বিনিময়ে ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালাতে পারে। এসব ড্রোনের ভয়াবহ প্রভাব খুব বিস্ময়কর কিছু নয়। ড্রোনের কারণে কোনো দেশ খুব সস্তায় বিমান বাহিনী গঠন করতে পারে। যাদের যুদ্ধবিমান কেনার সামর্থ্য নেই তারা সহজেই ড্রোন কিনতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ড্রোনের হুমকি যদি ভালোভাবেই বোঝা যায় তাহলে এটি প্রতিরোধ করা হচ্ছে না কেন? এ প্রসঙ্গে শ্যারে বলেন, ‘বর্তমানে যেসব ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে এর বেশিরভাগই প্রচলিত সামরিক বিমানের চেয়ে ছোট। এসব ড্রোন খুব নিচু থেকে ধীরে উড়ে। ফলে অনেক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই এসব ড্রোনকে গুলি করতে পারে না।’ তবে অনেক দেশই ড্রোন প্রতিরোধক অস্ত্র আবিষ্কারে কাজ করছে। সময়ের সাথে সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে আমরা কার্যকর ড্রোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা দেখতে পাবো।

[বিবিসির সাবেক প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংবাদদাতা এবং এক্সেটার ইউনিভার্সিটির স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড সিকিউরিটি ইনস্টিটিউটের সম্মানিত অধ্যাপক জোনাথন মার্কাসের প্রতিবেদন।]

SHARE

সব খবর

কপিরাইট © ২০২৪ TalkBarta দ্বারা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইট থেকে কোনো লেখা, ছবি ইত্যাদি কপি বা প্রকাশ করা কঠোরভাবে বেআইনি।