অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) ব্যবহার করার পরিবর্তে বিকল্প উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন অবৈধ হ্যান্ডসেট নিয়ন্ত্রণে এনবিআর, কাস্টমস, এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি বিটিআরসি ঘোষণা দেয় যে ‘অতি শীঘ্রই অবৈধ মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে’। ওই বিজ্ঞপ্তিতে জনগণকে মোবাইল হ্যান্ডসেট কেনার আগে বৈধতা যাচাই করে কেনার অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে, পরে সরকার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। কোনো হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে না। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত দেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। আর ওই সিদ্ধান্তের সময় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও। ফলে মোবাইল হ্যান্ডসেট বৈধ না অবৈধ, নেটওয়ার্কে চলবে কি চলবে না- সাধারণ মানুষের এই দুশ্চিন্তা দূর হয়। বিটিআরসির ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টারে (এনইআইআর) মোবাইল নেটওয়ার্কে আসা সব হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যায়। বিটিআরসি বলছে, হ্যান্ডসেট বা প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারে জনগণের কোনো অসুবিধা হতে দেয়া যাবে না। বিটিআরসি সফলভাবে দেশে সচল সব হ্যান্ডসেটের বিস্তারিত ডেটাবেইজ রাখছে। বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, অবৈধ হ্যান্ডসেট যেন দেশে প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে। এরমধ্যে এনবিআরকেও এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পুলিশ সদরদপ্তরেও দেয়া হয়েছে। ‘দেশে অবৈধ হ্যান্ডসেটের প্রবেশ ঠেকাতে কাস্টমস আরও সক্রিয় ভূমিকা নেবে। এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে’ জানান বিটিআরসি চেয়ারম্যান।
অবৈধ মোবাইল বন্ধে আগে যা হয়েছিল: ২০২১ সালের ১ জুলাই দেশে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয় ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর)। এরপর ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বৈধ কিংবা অবৈধ- গ্রাহকের হাতে মোবাইল নেটওয়ার্কে সচল থাকা সকল হ্যান্ডসেট বিটিআরসির ‘নক অটোমেশন অ্যান্ড আইএমইআই ডেটাবেইজ (এনএআইডি)’ সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত করা হয়। এরপর কথা ছিল ওই বছরের ১ অক্টোবর থেকে নেটওয়ার্কে নতুনভাবে সংযুক্ত সকল অবৈধ হ্যান্ডসেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। বিটিআরসিও তখন হ্যান্ডসেট বৈধ কিনা তা যাচাই করে কেনার পরামর্শ দেয়। কিন্তু মাত্র ২১ দিন পর এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিটিআরসি তখন থেকে দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে আসা যেকোনো হ্যান্ডসেট বিটিআরসির ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টারে (এনইআইআর) স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যায়। এরপর চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি আবারও অবৈধ হ্যান্ডসেট বিচ্ছিন্নের ঘোষণা দেয় বিটিআরসি। যেখানে বলা হয়েছিল, ‘জাতীয় পরিচিতি ও নিবন্ধিত সিম কার্ডের সাথে ট্যাগিং করে প্রতিটি মোবাইল ফোন নিবন্ধনের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি সেবা গ্রহণ-প্রদান নিশ্চিত করা, অবৈধভাবে উৎপাদিত বা আমদানিকৃত মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধ করার মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আহরণ নিশ্চিত করা ও ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের চুরি রোধ করার উদ্দেশ্যে এনইআইআরের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’ বিদেশ থেকে বৈধভাবে কয়টি হ্যান্ডসেট আনা যাবে? এখন বিদেশ থেকে একজন যাত্রী মাত্র একটি নতুন মোবাইল হ্যান্ডসেট আনতে পারবেন। তবে, সেটির শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। বিনাশুল্কে আনতে পারবেন দুটি ব্যবহৃত মোবাইল হ্যান্ডসেট। সেক্ষেত্রে একজন যাত্রী বিদেশ যাওয়ার সময় দেশ থেকে দুটি ব্যবহৃত হ্যান্ডসেট সঙ্গে নিয়ে গেলে এবং ফেরার সময় যদি একই দুটি হ্যান্ডসেটই সঙ্গে নিয়ে আসেন তাহলে সেগুলো বিনাশুল্কে আনা ব্যবহৃত হ্যান্ডসেট হিসেবে বিবেচিত হবে। মোটকথা, একজন যাত্রী বিদেশ থেকে তিনটি মোবাইল হ্যান্ডসেট আনতে পারবেন। একটি নতুন (শুল্ক পরিশোধ করে) এবং দুটি ব্যবহৃত (শুল্ক ছাড়া)। চলতি বাজেটে যাত্রী ব্যাগেজ বিধিমালা সংশোধন করে জারি হওয়া নতুন বিধিমালায় এ বিধান যুক্ত করা হয়েছে।