আন্তর্জাতিক মানের মোবাইল গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে কলড্রপের ক্ষতিপূরণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। ১ জুলাই থেকে কলড্রপ অভিযান শুরু হবে। একইসঙ্গে, অক্টোবর মাস থেকে দেশের বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে ফাইভজি এবং আইওটি ব্যবহার চালু করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে চারটি সেবাদাতা অপারেটরকে।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহক সেবার মান সংক্রান্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ কথা জানান।
তিনি বলেছেন, আমরা বিশ্বমানের মোবাইল ইন্টারনেট সেবা দিতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি। গ্রাহক সন্তুষ্টিতে কোনো আপোস করা হবে না। আশা করি চট্টগ্রাম বন্দরে দ্রুত ফাইভজি চালু করতে পারব। তবে আমরা অপারেটরদের জোরপূর্বক চাপিয়ে কাজ করাতে চাই না, বরং তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করে সহায়তা করব।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় অ্যামটব সভাপতি ও গ্রামীণ ফোন সিইও ইয়াসির আজমানসহ মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিটিআরসি কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদ, রবি আজিয়াটা কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ শাহেদুল আলম, অ্যামটব মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার প্রমুখ সভায় বক্তব্য রাখেন।
টাওয়ার স্থাপনে প্রতিবন্ধকতা দূর করার পাশাপাশি উদ্ভাবনী সেবা চালু করতে প্রতিমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন ইয়াসির আজমান। তিনি বলেন, উদ্ভাবনী সেবা বাজারে আনার সুযোগ প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে বিনিয়োগ সুরক্ষা পেলে আমরা সেবার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কোভিডকালে মোবাইল অপারেটরদের ভূমিকার প্রশংসা করে সভায় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মোবাইল ফোন এখন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। তবে, আমাদের গ্রাহকেরা তাদের সেবা নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই সন্তুষ্ট নন। কলড্রপ একটি নিয়মিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিটিআরসির পরীক্ষাগুলো অনুসারে সেবার মান খুব সন্তোষজনক নয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে একটি স্মার্ট টেলিকম ইকোসিস্টেম উপহার দিতে চাই। আগামী ছয় মাসের মধ্যে কলড্রপ নিয়ে অপারেটরদের দেওয়া তথ্যের চেয়ে গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া আমাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা গ্লোবাল বেঞ্চমার্কে পৌঁছাতে চাই, কারণ এটি আমাদের দেশের ব্র্যান্ডিংয়ে বড় প্রভাব ফেলে।’
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, কলড্রপের জন্য গ্রাহকের ক্ষতিপূরণ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটররা যদি প্রতিশ্রুত সেবা না দেয় তবে তাদের গ্রাহককে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আমরা মনিটরিং এবং অডিট নিয়মিত করব। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ড্রাইভ টেস্টের ফলাফল পর্যালোচনা করে তিনি বলেন, শহর বা গ্রাম যেখানেই হোক মিডিয়ার রিপোর্ট গুরুত্ব দিয়ে আমরা সেখানে ড্রাইভ করব।
তিনি বলেন, ইন্টারনেটের গতি কম হওয়ার কারণ এবং গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আমরা পরীক্ষা চালাচ্ছি। কারিগরি পরিদর্শন দল গঠন করা হয়েছে যারা সেগুলো পরীক্ষা করছে।
মোবাইল অপারেটরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কলড্রপের ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের সেরা মানের একটি বেঞ্চমার্কে পৌঁছাতে চাই। কলড্রপের কারণে সময় এবং এনার্জি নষ্ট হয়, গ্রাহক বিরক্ত হয়। এছাড়া অপারেটরদেরও টেকনিক্যাল এবং আর্থিক ক্ষতি হয়। তাই সমাধানে যেতে হবে, যত কঠিনই হোক।’
পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল সেবা নিয়ে পলক বলেন, ফাইভজি রোল আউটের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য বিটিআরসি এবং চারটি মোবাইল অপারেটরকে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, বিমানবন্দর, সমুদ্র বন্দর, কিছু ব্যবসায়িক এলাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে ফাইভজি চালু করা হবে। তারপর ধীরে ধীরে অন্যান্য স্থানে।
তিনি বলেন, আমাদের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল অক্টোবরে উদ্বোধন হতে পারে। অক্টোবরকে লক্ষ্য করে চারটি মোবাইল অপারেটরকে চ্যালেঞ্জ দিতে চাই, যেন অক্টোবরের ৩০ তারিখের মধ্যে সেখানে ফাইভজি নিশ্চিত করা যায়। এছাড়া গুলশান, বনানী, মতিঝিল এবং আগারগাঁও এলাকায় ফাইভজি এনাবল স্মার্টফোন বেশি ব্যবহৃত হয়। আশা করি, এখানেও মনোযোগ দেয়া হবে।